ঢাকা , শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫ , ১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

​চট্টগ্রামে বৃষ্টি আর সরবরাহ কম অযুহাত বেড়েই চলেছে সবজির দাম সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস


আপডেট সময় : ২০২৫-০৮-১৬ ১৬:০৭:৫৭
​চট্টগ্রামে বৃষ্টি আর সরবরাহ কম অযুহাত বেড়েই চলেছে সবজির দাম সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস ​চট্টগ্রামে বৃষ্টি আর সরবরাহ কম অযুহাত বেড়েই চলেছে সবজির দাম সাধারণ মানুষের হাঁসফাঁস

এম মনির চৌধুরী রানা চট্টগ্রাম 

চট্টগ্রামে হঠাৎ অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার। শুধু নিত্যপণ্য নয়, বেড়েছে ভোগ্যপণ্যের দামও। পাইকারি ভোগ্যপণ্যের বাাজার চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে খুচরা বাজারে কেজিপ্রতি ৯০ টাকার কমে মিলছে না পেঁয়াজ। পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার কাছাকাছি দামে।

যদিও দুই সপ্তাহ আগে, পেঁয়াজের কেজি ছিল ৬০ টাকার নিচে। এক মাসের ব্যবধানে চাল, ডাল, আটা, মুরগির ডিম, সোনালি মুরগি, মাছ ও বেশকিছু সবজির দাম সর্বোচ্চ ৫৫ শতাংশ বেড়েছে। আয়ের সঙ্গে সংগতি না থাকায় খাদ্যপণ্যের চড়া দামে দিশেহারা সাধারণ ক্রেতা। এতে নিম্ন ও নির্দিষ্ট আয়ের পরিবারগুলোয় আর্থিক চাপ আরও বেড়েছে। ৮০ টাকার কমে মিলছে না কোনো সবজি। বাজারে সবজির পাশাপাশি বেড়েছে মাছের দামও।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বৃষ্টি ও সরবরাহ কম হওয়ায়, নানা অজুহাতে বেড়েছে পণ্যের দাম। প্রশাসনের তদারকির কথা থাকলেও তেমন কোনো মনিটরিং নেই বললেই চলে। পণ্যমূল্যের ভারে হাঁসফাঁস নিম্নবিত্তের জীবন। শুধু নিম্নবিত্ত নয়, মধ্যবিত্ত শ্রেণিও নিত্যপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় হিমশিম খাচ্ছে।

দ্রব্যমূল্যের এই ঊর্ধ্বগতির পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি, ডলার সংকট, সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাতের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রামে বাজার মনিটরিংয়ের পরও দিনদিন অস্থির হয়ে পড়ছে ভোগ্যপণ্যের বাজার। কোনো পণ্যের দাম কমার কোনো লক্ষণ নেই। সরকার নির্ধারিত দাম কাগজে-কলমে থাকলেও বাজারের কোথাও এ দামে পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।

এছাড়াও, ভোজ্যতেল চালসহ নানা পণ্যের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতাদের নাভিশ্বাস উঠছে। এ অবস্থায় অনেকেই অতিপ্রয়োজনীয় ২/১টি জিনিস কিনে বাকি পণ্য না নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা বলছেন, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের নেতৃত্বে গঠিত টাস্কফোর্স কমিটি বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। শুধু জেলা পর্যায়ে নয়, উপজেলা পর্যায়েও টাস্কফোর্স কমিটি ব্যাপক ভিত্তিক বাজার মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

একইভাবে টাস্কফোর্স কমিটির বাজার মনিটরিংয়ের পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতও পরিচালনা করছে, জেলা প্রশাসন। বর্তমান সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী যে কোনো মূল্যে সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো কারণ ছাড়াই বেড়েছে চালের দাম। বাজারে প্রতি কেজি মোটা চাল এখন ৫৮-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা আগে ছিল ৫৫-৫৬ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৮৮-৯০, যা আগে ছিল ৮৫ থেকে ৮৮ টাকা। উত্তরাঞ্চলের মিল মালিকরা পরিবহণ সংকট, সরবরাহ সংকট, টানা বৃষ্টি, ধানের দাম বৃদ্ধি এবং মজুত কমে যাওয়াসহ নানা অজুহাত দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। সিন্ডিকেট কারসাজি করে প্রতিবছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে চালের বাজার অস্থির করে তোলেন মিল মালিকরা। এছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রশাসন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। মূলত প্রশাসনের নজরদারির অভাবকে পুঁজি করে ধান-চালের দাম ওঠানামা করান আসাধু ব্যবসায়ী।

অন্যদিকে নগরীর চাক্তাইয়ের মিল মালিকরা বলছেন, গত দুই মাসে মনপ্রতি ধানের দাম বেড়েছে ২০০ টাকা পর্যন্ত। যার প্রভাব পড়েছে চালের বাজারে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে ভালো মানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮০ টাকা, যা ১০ দিন আগের চেয়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি। পাইকারি বাজারে এক সপ্তাহ আগেও পেঁয়াজের দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।

এক সপ্তাহ আগে, বিক্রি হয়েছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। মাঝারি মানের দেশি পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭২ টাকায়, যা আগে ছিল ৫০ টাকার কম। এই মানের পেঁয়াজ খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫-৮০ টাকায়। খুচরা বাজারে আগে ছিল ৫৫-৫৮ টাকা। আরও নিম্নমানের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। খুচরা বাজারে এই মানের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকার বেশি দামে। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৪৬-৫০ টাকা।

পাহাড়তলী বাজারের চালের আড়তদার কামরুল হুদা বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন মিল ও মোকাম চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি বেড়েছে পরিবহণ খরচও। এ কারণে চট্টগ্রামেও বাড়ছে চালের দাম। এখানে আমাদের কোনো হাত নেই। বেড়েছে মসুর ডালের দামও। দেশি মসুর ডালের দাম কেজিতে ১১ থেকে ১৪ শতাংশ বেড়ে এখন ১৫৫ থেকে ১৬০ টাকা। খোলা আটার দাম কেজিতে ১২ শতাংশ বেড়ে ৪৫ টাকা। টানা বৃষ্টির প্রভাব পড়েছে সবজির বাজারে। বাজারে ৮০ টাকার কমে মিলছে না কোনো সবজি। কাঁকরোল, ঝিঙা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ, শসা, করলা প্রতি কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বরবটি ১২০, বেগুন ৮০-১০০ ও টমেটো ১৫০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কচুর মুখি ও মুলা কেজিপ্রতি ৬০-৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। গাজর ১৬০, হাইব্রিড শসা ৬০, শালগম কেটি ৮০ ও কাঁচা কলার হালি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ টাকা দরে। চট্টগ্রামে বেড়েছে মাছের দামও। খুচরা বাজারে এক-দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ২০০০-২৪০০ টাকা, ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৫০০, এক কেজির কিছু কম ওজনের ইলিশ ১৮০০-২০০০ এবং জাটকা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায়। দুই-আড়াই কেজি ওজনের বড় ইলিশ প্রতি কেজি তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পোয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৫০০, লইট্যা ২০০-২২০, ফাইস্যা ১৮০-২০০, কোরাল ৬০০-৯০০, রূপচান্দা আকারভেদে ৩৫০-৭০০, আইড় ৪০০-৬৫০ এবং চিংড়ি ৬৫০-১২০০ টাকা। সোনালি মুরগির দাম এমনিতেই বাড়তি ছিল। নতুন করে ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেড়ে এখন ৩২০-৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, ব্রয়লার মুরগি ১৬৫-১৭০, দেশি মুরগি ৬০০-৬২০, কক ৩৫০ এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০-৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর কেজি ৮৫০-৯৫০ টাকা। দীর্ঘ অপেক্ষার পর চাঁদপুরে ইলিশের দাম কিছুটা কমেছে। ছোট থেকে বড় সব সাইজের ইলিশের কেজি প্রতি দাম কমেছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই ইলিশের দাম বেশি থাকায় সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে ছিল ইলিশ মাছ। দাম কমায় কিছুটা স্বস্তি এসেছে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও। 

স্থানীয় মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান, চলতি মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা ইলিশের সরবরাহ এতোদিন কম ছিল। তবে গত কয়েকদিন চাঁদপুর মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ইলিশের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। তাই আড়তগুলো এখন সরগরম হয়ে উঠেছে ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে। প্রতিদিন গড়ে ৪০০ থেকে ৫০০ মণ ইলিশ আমদানি হচ্ছে। তাই দামও কিছুটা কমেছে।

স্থানীয় বাজার পর্যালোচনা করে জানা যায়, কয়েকদিন আগেও এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ছিল ৩ হাজার টাকা। দর কমে প্রতি কেজি ইলিশ এখন ২২০০ থেকে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চলমান আমদানি অব্যাহত থাকলে বিগত দিনের লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।




 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ